ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় হুন্ডির কবলে

dolar sonঅনলাইন ডেস্ক :::

হুন্ডিবাজরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের একটি অংশ আসছে তাদের মাধ্যমে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা দেশে অর্থ না এনে বিদেশে আমদানি বিল পরিশোধ করছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া ডলারের দাম নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে হয়রানি ও বিনিময় হার কম হওয়া, অন্যদিকে অবৈধপথে সহজে বেশি বিনিময়মূল্য পাওয়ায় হুন্ডি হচ্ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, দুই অর্থবছর ধরে দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্স এসেছে ৯১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ১০৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে ১৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে রপ্তানি আয় হয় ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। গত বছর এ প্রবৃদ্ধি হয় ৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি তেলের দাম কমে যাওয়া ও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় মন্দার কারণে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে গেছে। বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠালে ৭৯ থেকে ৮০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে হুন্ডিতে মিলছে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। এ জন্যই তারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব রেমিট্যান্স আসছে, সেগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে হুন্ডি। এদিকে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। একদিকে আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হুন্ডিবাজদের অবৈধ লেনদেনের নিরাপদ দেশ দুবাই, মালয়েশিয়া ও হংকং। রপ্তানি আয়ের কিছু অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনা হচ্ছে। বেশিরভাগই অর্থ আনা হচ্ছে হুন্ডিতে। দুবাই, মালয়েশিয়া ও হংকংয়ের ব্যাংকিং নিয়মনীতি অনেক শিথিল থাকায় ওই দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ওই অর্থ বৈধ করে নিচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। অনেকে রপ্তানিকারক আবার আমদানিকারক। আমদানিপণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। এলসিতে কম পরিমাণ মূল্য দিয়ে বাকি মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে নগদে। দুবাইসহ অন্য দেশে রেখে দেওয়া ওই নগদ অর্থ দিয়ে আমদানির মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। এভাবে দেশ একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রপ্তানি করে অর্থ দেশে না আনার অনেক প্রমাণ ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেয়েছে। এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ২৯৭ কনটেইনার তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন; এর বিপরীতে এক ডলারও দেশে আসেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া অর্থপাচারের জন্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে শিল্পের যন্ত্রপাতি ভর্তি কনটেইনারে পাওয়া গেছে ছাই, ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টের ব্লক। শিল্পের কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে খালি কনটেইনার আমদানির ঘটনাও ধরা পড়েছে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ইনভয়েসে পণ্যের দাম কম-বেশি দেখিয়ে পাচার হচ্ছে ৬০ শতাংশ অর্থ।

এক বেসরকারি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবৈধ চ্যানেল অনেক রেমিটার ও রপ্তানিকারকদের কাছে সহজলভ্য। কয়েক দিন আগে ডলারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায় থাকলেও অনেকেই ওই দরেও অর্থ দেশে পাঠাননি। তারা ব্যাংকের কাছে আরও বেশি মূল্য দাবি করে। স্বাভাবিকভাবেই ওই রেমিটার ও রপ্তানিকারকদের ভিন্ন পথে আরও বেশি মূল্যে অর্থ দেশে আনবেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অবৈধ চ্যানেল সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় রেমিটাররা সেদিকে ঝুঁকছেন। বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় বাজার আরও সহজ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ডকে আরও সক্রিয় হতে হবে। হুন্ডি হচ্ছে এ অভিযোগ অনেক পুরনো। অর্থপাচারের অনেক অভিযোগও রয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে বৈধ চ্যানেল নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

 

পাঠকের মতামত: